মেসির কান্নার এক বছর এবং সুখের বাস্তবতা

ঈশ্বরের চোখে জল দেখে সেদিন ঝড় উঠেছিল বিশ্বজুড়ে কোটি ভক্তের মধ্যেই। মনের রক্তক্ষরণের দৃশ্যধারণ করা যায় না বলেই রক্তের মহাসাগর কেউ স্বচক্ষে দেখেনি কভু। তবু ঈশ্বরের দুঃখ বলেই সেই রক্তের মহাসাগরের বিস্তৃতি আঁচ করা যায় ন্যূনতম কল্পনায়।

এই ঈশ্বর হলেন ফুটবল জাদুকর লিওনেল আন্দ্রেস মেসি। আর কান্নার সেই গল্পটা আজ থেকে ঠিক বছর খানেক আগে ৪ আগস্ট, ২০২১; ন্যু ক্যাম্প বিদায়ের দিন মঞ্চস্থ হয়েছিল। ২১ বছরের সম্পর্ক ছিন্ন করে মেসি যখন কাতালান ক্লাব বার্সেলোনা ছাড়ার কথা বলছিলেন, আবেগকে ধরে রাখতে পারেননি। ভীষণ দুঃখে উপস্থিত সাংবাদিকদের সামনেই চোখের জলে ভেসেছিলেন।
সেই কান্নার এক বছর পর সুখের বাস্তবতায় নতুন করে হাসতে শিখেছেন আর্জেন্টিনার এই ফুটবল জাদুকর। বার্সেলোনার হয়ে বছরের পর বছর গোলবন্যার রেকর্ড বইয়ে দেওয়া মেসি প্যারিস সেইন্ট জার্মেইতে (পিএসজি) যোগ দেওয়া প্রথম মৌসুমে যেন হারিয়ে গিয়েছিলেন। বার্সার জার্সিতে সর্বশেষ এক যুগেও কোনো মৌসুমে ন্যূনতম ২০ গোলের নিচে না করা মেসি যেন পিএসজির জার্সিতে নিজের ছায়া হয়ে ছিলেন।
বার্সার জার্সিতে ৭৭৮ ম্যাচে ৬৭২ গোল করা মেসি সর্বশেষ মৌসুমে পিএসজির হয়ে ৩৩ ম্যাচ খেলে ১০ গোল করতে পেরেছিলেন মোটে। অ্যাসিস্ট ছিল তার চেয়ে ৪টি বেশি, ১৪টি। মেসি কী তবে হারিয়েই গেল? এমন রব উঠতে তাই সময় নেননি তার পাঁড় সমালোচকরা।
প্রিয় ক্লাব ছাড়তে পারেননি বলেই হয়ত পিএসজিতে সাদা-কালো স্মৃতির মতোই পারফরম্যান্স করেছিলেন মেসি। তবে জাতীয় দলের জার্সিতে এই সময়েই নিজের সেরাটা পেতে শুরু করলেন। এক বছরের মধ্যে জিতলেন দুটি শিরোপা। কোপা আমেরিকার পাশাপাশি ফাইনালিসিমাও নিজের করে নিলেন। মেসি যে ফুরিয়ে যাননি সেটিই ছিল তার প্রমাণ।
কিন্তু ৩৬ বছর বয়সী মেসি বছরের পর বছর নতুন নতুন জাদুতে মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখার পরেও নতুন জাদু জমিয়ে যে রেখেছেন সেটি জানান দিতে পিএসজির হয়ে নতুন মৌসুম পর্যন্ত অপেক্ষা করে ছিলেন তিনি। আর তাইতো পিএসজির হয়ে নতুন মৌসুমের প্রথম দুই ম্যাচেই ৩ গোল আর ১ অ্যাসিস্টের গল্প লিখতে শুরু করেছেন। যেখানে ওভারহেড কিকে নতুন অধ্যায়ের সূচনাও করেছেন এই জাদুকর।
Untitled-1

ছবি: ওভারহেড কিকে প্রথম গোল মেসির।

কেবল নিজের জাদুতে থেমে না থেকে সতীর্থ ব্রাজিলিয়ান নেইমারকেও যেন স্বরুপে ফেরাতে সাহায্য করলেন। গত মৌসুমে ২৮ ম্যাচে ১৩ গোল আর ৮ অ্যাসিস্ট করা নেইমার তাই নতুন মৌসুমের শুরুতে জাদুকরের পাশেই জাদুর বাক্স মেলে ধরেছেন। ২ ম্যাচ থেকে ৩ টি করে গোল এবং অ্যাসিস্ট আদায় করে নিয়েছেন নেইমারও।
এভাবেই মেসির সেই কান্নার গল্প তাই বছর পেরিয়ে সুখের বাস্তবতায় রূপ নিয়েছে। এই মৌসুমে মেসির এই সুখের জিওনকাঠি, জাদুর ছোঁয়ায় পিএসজিও প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়নস লিগের শিরোপার স্বপ্ন নতুন করে দেখতেই পারে। অবশ্য গল্পের তো এখনো শুরু, পথটা অনেক দূরের, পাড়ি দিতে হবে বহুদূর। এই পথ মসৃণ করতে পারেন কেবল, লিওনেল আন্দ্রেস মেসি।

Untitled-2

ছবি: পিএসজি সতীর্থদের সঙ্গে মেসি।

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post